আপনার ভালো স্বাস্থ্যের জন্যে সাপ্লিমেন্ট অপরিহার্য। গবেষণা পরিচালক ড. মাইকেল ডোনাল্ডসন বলছেন হেলদি ফুডের পরেও কেন আপনার সাপ্লিমেন্ট দরকার।
১) যে ফল এবং শাক সবজি আমরা খাই তা আর আগের মত পুষ্টিকর নেইঃ সার, কীটনাশক ইত্যাদির ব্যবহার এবং কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসায় মাটির উর্বরতা আর আগের মত নাই। যে ফসল হয় তাতে মিনারেল বা খনিজ একদমই অল্প। তাই আমাদের খাদ্য আর আগের মত পুষ্টিকর নাই। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, যত ফসল হয়, তত খনিজের ঘনত্ব কমতে থাকে। ৫০ থেকে ৭০ বছর আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় এখনকার শাক সবজি ও ফলে অনেক দরকারি পুষ্টি উপাদান একেবারে থাকেই না। হাইব্রিড ব্রকোলি, গম, ভূট্টা এসবে খুবই সামান্য পরিমাণে মিনারেল বা খনিজ উপাদান থাকে।
এখনকার খাদ্যে পুষ্টি উপাদান কম থাকায় অর্গানিক খাদ্য ও প্রাকৃতিক জিনিসের চাহিদা মারাত্মক বাড়ছে। সেইসাথে সুপারফুডের চাহিদাও বাড়ছে। বাজারে বা সাধারণ দোকানে যেসব ফলমূল ও শাক সবজি পাওয়া যায় সেগুলি সাধারণত অর্গানিক হয় না।
২) বয়স বাড়ার সাথে সাথে খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীর বদলাতে থাকে এবং এ সময় আরো বেশি পুষ্টির প্রয়োজন হয় ঃ তরুণ বয়সে যে রকম পুষ্টি দরকার, বয়স বাড়লেও সে পরিমাণ পুষ্টিরই দরকার পড়ে। কিন্তু বয়স্করা তরুণদের সমান ক্যালরি খরচ করে না। সে কারণে বয়স্কদের উচিৎ প্রতি ক্যালরি গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুষ্টি নিশ্চিত করা। খেয়াল রাখা দরকার, শরীরের প্রতিটি কোষেই যেন পুষ্টি নিশ্চিত হয়। এই ক্ষেত্রে সুপার ফুড এবং ত্রল খাবার যেমন, সবজির জুস কাজের হয়। শরীর সবজিগুলিকে একেবারে প্রস্তুত অবস্থায় গ্রহণ করতে পারে।
সঠিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণের আরেকটি উপায় হজমের এনজাইম নেওয়া। দেখা গেছে, সম্পূরক এনজাইম খাদ্য থেকে পুষ্টি গ্রহণ এবং হজমে সহায়তা করে। ডাইজেস্টিভ এনজাইম গ্রহণ করলে ক্যালরির অনুপাতে পুষ্টি গ্রহণের মাত্রাও ঠিক রাখা যায়।
৩) সম্পূরক খাদ্যের মাধ্যমে নানান স্বাস্থ্য সমস্যা সহজে মোকাবেলা করা যায়ঃ প্রত্যেকেরই কোনো না কোনো শারীরিক দুর্বলতা থাকে। সেগুলির কারণে কখনো কখনো আমাদের স্বাস্থের উপর দিয়ে বেশ ধকল যায়। কিছু কিছু সম্পূরক আমাদেরকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এই অসুস্থতার সময়ে সাহায্য করে।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যদি ক্যান্সারের চিকিৎসার অধীনে থাকেন তাহলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং গাঢ় সবুজ তরল চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমিয়ে দেয়, এবং এতে চিকিৎসার কার্যকারীতার উপর কোনো প্রভাব পড়ে না।
অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের সময় এবং পরে প্রোবায়োটিক সম্পূরক খুবই দরকারি জিনিস। নারীরা জ্বালাপোড়ার সমস্যা, মাইগ্রেন, অনিদ্রা, রাতে ঘেমে যাওয়া ও অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় সম্পূরক ব্যবহার করতে পারেন।
যদিও একেকজনের পুষ্টিগ্রহণের পরিমাণ এবং ধরন আলাদা আলাদা, তবু কেউই রোগব্যাধি মুক্ত এবং শক্তিশালী ও কর্মক্ষম জীবন যাপনের জন্য শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করতে পারে না। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং সম্পূরক গ্রহণের পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে শরীরের বাড়তে থাকা পুষ্টি-চাহিদার প্রতি।
৪) নির্দিষ্ট কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান বিশেষ ধরনের খাদ্যাভাস ছাড়া সাধারণ খাবারে সঠিক পরিমাণে পাওয়া যায় নাঃ
ভিটামিন বি-১২
গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের অনেকেরই ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি রয়েছে। আমিশাষী ও নিরামিশাষী উভয়ের ক্ষেত্রেই এই ঘাটতি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ঘাটতি বাড়তে থাকে। ৩০০০ লোকের উপর একটি গবেষণায় দেখা গেছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার পরেও ৩৯ শতাংশ লোকের ভিটামিন বি-১২ এর অভাব রয়েছে। শরীরে শক্তি উৎপাদন, হরমোনগত মেটাবলিজম, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্নায়ু স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি-১২ একটি দরকারী উপাদান।
আয়োডিন
শরীরের বেশির ভাগ প্রত্যঙ্গের জন্যই আয়োডিন খুব দরকারি একটি উপাদান। শরীরের প্রায় প্রতিটি গ্রন্থিই আয়োডিন গ্রহণ করে থাকে, এবং খুব সামান্য পরিমাণে আয়োডিন গ্রহণ করলেও শরীরের প্রতিটি টিস্যুতে আয়োডিন পৌঁছে যায়। প্রোস্টেট, থাইরয়েড, জরায়ু এবং স্তনের কার্যকারিতার জন্য আয়োডিন খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আপনার খাবার থেকে শরীর যে সামান্য পরিমাণে আয়োডিন পায় তা শরীরের জন্য যথেষ্ট নয়। শরীরে আয়োডিনের মাত্রা যথাযথ রাখার জন্য প্রতিদিন এক অথবা দুই ফোটা সম্পূরক আয়োডিন খুব কার্যকরী।
ভিটামিন ডি-৩
গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি মানুষের শরীরেই আয়োডিন যথাযথ পরিমাণে নেই। সূর্যের আলো থেকে মূলত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। বিশেষ করে মধ্যবয়স্ক এবং বয়স্ক নারীদের ভিটামিন ডি-৩ এর মাত্রা যথাযথ রাখার জন্য সম্পূরক ভিটামিন ডি-৩ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক আর আগের মত ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না। একই পরিমাণ সূর্যের আলো থেকে একজন বিশ বছর বয়সী মানুষের ত্বক যে পরিমাণ ভিটামিন ডি তৈরি করে, একজন সত্তর বছর বয়সী মানুষের ত্বক তার চার ভাগের এক ভাগ তৈরি করতে পারে। সম্পূরক ভিটামিন ডি-৩ যথাযথ মাত্রায় গ্রহণ করলে হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা, কোলন, ব্রেস্ট এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
মাছের তেল বা ফিশ অয়েল
গবেষণায় দেখা গেছে মাছের তেলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইপিএ (EPA) এবং ডিএইচএ (DHA) সব বয়সী মানুষের মানসিক তীক্ষ্ণতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি মায়ের পেটে থাকা ভ্রূনের জন্যও প্রয়োজনীয়। আইকিউ বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক সক্রিয়তা, বিষণ্ণতা প্রতিকার, অটিজম রোধ করা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে মাছের তেল। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নিরাময়, হার্টের কার্যকারিতা রক্ষা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও মাছের তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে যারা মাছ খায় না তাদের জন্য সম্পূরক ডিএইচএ (DHA) খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
সাবধানতা
পিল, পাউডার বা তরল আকারে সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। অনেকে খাবার কম খেয়ে সাপ্লিমেন্ট (যেমন ভিটামিন ট্যাবলেট) দিয়ে পুষ্টির অভাব পূরণ করবেন মনে করেন। এভাবে পুষ্টির অভাব পূরণ হয় না। “সাপ্লিমেন্ট” বা সম্পূরক মানে কিছু “যোগ করা”। সাপ্লিমেন্ট মানে খাবারের বিকল্প নয়।
অনেক সময় লোকে সাপ্লিমেন্ট বলতে খাদ্যজনিত সমস্যার দ্রুত সমাধান ভেবে থাকেন। শক্তি, স্ট্যামিনা এবং স্বাস্থ্য আসে যথাযথ পুষ্টি এবং যথাযথ কাজকর্ম থেকে। আপনি অষুধের দোকানে তা কিনতে পাবেন না। ভিটামিন, খনিজ ও ক্যালরি সংক্রান্ত সাপ্লিমেন্ট আপনার স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সহায়তা দিবে ঠিক, কিন্তু আপনি কী অবস্থায় এবং কখন কোন সাপ্লিমেন্ট নিবেন সে ব্যাপারে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা অনেক বেশি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ আপনার জন্যে বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।
সূত্রঃ সাম্প্রতিক.কম